মেহেরাজ আহমেদ
বাংলাদেশ বেতার সিলেট কেন্দ্রে ”কারিগরী সহকারী” পদে ৩১/০৫/১৯৮৯ খ্রি: তারিখে যোগদান করি। সিনিয়র সহকর্মী মরহুম আক্কাস খাঁনের মাধ্যমে মেডিক্যাল কলেজের পার্শ্বে কাজলশাহ আবাসিক এলাকায় মোস্তাকদেরকে প্রাইভেট পোড়ানোর মাধ্যমে গৃহ শিক্ষক হিসাবে যাত্রা শুরু করি। আস্তে আস্তে যশ খ্যাতি শিক্ষক হিসাবে বাড়তে থাকে। দীঘির চতুর্পাশের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলের কাছে একটি পরিচয় “শিক্ষক” হিসাবে। স্কুলের নির্ধারিত পড়াশুনার পাশাপাশি পাড়ার ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বই এর সংস্পর্শে রাখার মনোভাব থেকে “সিলেট সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ফোরাম” নামে পাঠাগার সৃস্টি । সেই পাঠাগার সমৃদ্ধ করণের জন্য বই সংগ্রহ পড়ার জন্য টেবিল-চেয়ার যোগাড় করা। ইতিমধ্যে প্রায় বছর হয়ে গেলো “বাতায়ন” নামক সুভ্যেনির প্রকাশ করার উদ্যোগ। ম্যাগাজিন করার জন্য প্রচুর অর্থের দরকার। সরকারী দায়িত্ব পালনের পর দলবল নিয়ে জিন্দা বাজার এর বিভিন্ন দোকানে “এড” সংগ্রহের জন্য গমন যা ছিল আমাদের নিত্যদিনের কাজ। সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে আমরা বাতায়ন প্রকাশ করতে সমর্থ হয়েছি। কি যে এক আনন্দ যা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। পাঠাগারটি আস্তে আস্তে আমাদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছিল।
পাঠাগার থেকে বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হতো। সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করা হতো । পাড়ার সকলের একান্ত সহযোগিতায় নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস পাড়ার সকল বয়সী ছেলে-মেয়ের মধ্যে তৈরী করাই ছিল আমাদের মূল-উদ্দেশ। পাঠাগার সৃস্টিতে যাদেরকে সহযোদ্ধা হিসাবে পয়েছি তাদের মাঝে আরিফ, সেলেমান, নাজমুল, বাপ্পুদা, সেলিম, শাহীন, মস্তাক, সহ আরও অনেক কর্মী ছিলেন। এখন আর তাদর নাম মনে করতে পারছিনা বলে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। পাঠাগার ছিল অনেকটা মিলন-মেলার মত। সারাদিন ক্লান্ত হয়ে ব্যাটারী চার্জ করার মত নিজেকে চাঙা করতে পাঠাগারে গিয়েছি। দীঘির চতুর্পাশের বাসিদারা ছিলেন আমার পরম আত্মীয়। কাজলশাহ গেলে মনে হয়েছে আমি নিজ পাড়ায় হাজির হয়েছি। চাকুরী জীবনের সুবাদে প্রায় ৩০টি বছর আপনাদের সাথে কাটিয়েছি কাজলশাহ আমার ২য় জন্মস্থান ছিল। যার আলো বাতাস খেয়ে বড় হয়েছি, তা কি ভুলে যায়? পাড়ার সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আপনারা সর্বদা আমাকে নিজ সন্তানের মতো মায়া করেছেন যত দূরে থাকিনা কেন আমি কল্পনায় এখনও আপনাদের মাঝে নিয়মিত বিচরণ করি। সরকারী প্রয়োজন ও পদোন্নতি পেয়ে আমাকে সাময়িক আপনাদের কাছ থেকে দরে চলে আসতে হয়েছে। যদি কোন সময় আবার ও সুযোগ হয় তবে আমি অবশ্যই ফিরে আসব আপনাদের কাছে।
“মোর নাম এই বলে খ্যাত হউক আমি তোমাদের লোক”
যে সকল বন্ধ ও সহযোদ্বাদের নাম মনে করতে পারিনি তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
বাতায়নের উজ্জল ভবিষ্যত কামনা করি।
(আঞ্চলিক প্রকৌশলী,বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজার)